Saturday, September 28, 2013

কাফেরদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত না দিলে কি মুসলিমরা অপরাধি হবে?

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
Muslim Kid pray to Allah
Islam is the Best Religion of World.

শিরোনাম: কাফেরদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত না দিলে কি মুসলিমরা অপরাধী হবে?
ভাষা: বাংলা
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এ ফতওয়াটিতে কাফেরদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত না দেয়াতে মুসলিমদের গুনাহ হবে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কাফেরদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত না দিলে কি মুসলিমরা অপরাধি হবে?
কাফেরদের ইসলামের প্রতি দাওয়াত না দেওয়াতে মুসলিমরা গুনাহগার হবে কিনা?
প্রশ্ন: পিস টিভি চ্যানেলের একাধিক বক্তা ও দা‘য়ী আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে সব অমুসলিমের সাথে তুমি উঠ-বস কর এবং যাদেরকে তুমি চেন, তাদেরকে যদি তুমি ইসলামের দিকে দাওয়াত না দাও, তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে তোমার বিপক্ষে অভিযোগ করবে যে, তুমি তাদের ইসলামের প্রতি দাওয়াত দাও নি। এ কথাটি কতটুকু সঠিক? যদি সঠিক হয়, তাহলে এর প্রমাণ কি? যাদের সাথে আমার রাস্তা-ঘাটে দেখা-সাক্ষাত হয় তাদের সবার ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য, নাকি যাদের আমি ভালোভাবে চিনি শুধু তাদের সাথে বিষয়টি খাস? আমাদের সহকর্মী, প্রতিবেশী এবং রাস্তায় চলার সময় যাদের সাথে দেখা হয়, তারা সবাই কি এ সব লোকদের আওতায় পড়ে, যাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া জরুরী ও ওয়াজিব?
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ
এক- মনে রাখ, আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়া সার্বিক দিক বিবেচনায় ওয়াজিব ও ফরযে কেফায়া। যদি কোন একজন দা‘ঈ, আলেম ও তালেবে ইলম দাওয়াতের এ মহান দায়িত্ব পালন করে, তবে অন্য মুসলিমরা দায় মুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢ ﴾ [التوبة: ١٢٢]
“আর মুমিনদের সকলের একসাথে অভিযানে বের হওয়া সংগত নয়। অতঃপর তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন  করতে পারে  এবং তাদের সম্প্রদায়কে ভীতিপ্রদর্শন করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১২২]
তবে কখনো কখনো এ দাওয়াতের দায়িত্বটি ব্যক্তির উপর বর্তায়। যেমন কোনো এলাকায় একজন লোকই আছে সেখানে আর কোন দা‘ঈ নাই, (অন্যরা সাধারণ মানুষ) অথবা অন্য কোন দা‘ঈ থাকলেও এখানে একটি সমস্যা তৈরী হয়েছে যা সে লোক ছাড়া আর কারো দ্বারা বন্ধ হওয়া সম্ভব নয় অথবা কেবল যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করে তার আহ্বান ছাড়া সে সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব নয়, এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির উপর দাওয়াতের কাজ করা সুনির্দিষ্ট হয়ে পড়ে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। তবে এটি ফরযে কিফায়াহ; ফরযে আইন নয়। আর ফরযে আইন বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর দাওয়াত দেয়া তখন ওয়াজিব হয় যখন লোকটি দাওয়াত দিতে সক্ষম এবং সে ছাড়া আর কেউ দাওয়াত না দেয়। এটিই হল, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বাধা দেয়া, রাসূল সা. যে দীন নিয়ে এসেছে তা মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া, আল্লাহর রাহে জিহাদ করা এবং ঈমান ও কুরআন শেখা। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া [১৫/১৬৬])
আল্লাহর দীনের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেয়া ফরযে কিফায়া হওয়ার প্রমাণ:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤ ﴾ [ال عمران: ١٠٤]
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।” [সূর আলে ইমরান: ১০৪]
শাইখ আবদুর রহমান আস-সা‘দী রহ. বলেন, এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ নির্দেশ যাতে তাদের মধ্য হতে একটি জামাত এমন হয় যারা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করার কাজে লেগে থাকবে এবং মানুষকে আল্লাহর দীনের পথ দেখাবে। আলেম ওলামাদের পক্ষ থেকে মানুষকে দীন শেখানো, ওয়াজ নছিহত করা ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ইসলামে প্রবেশ করার আহ্বান করা এবং দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া লোকদের দ্বীনের উপর অবিচল থাকার নছিহত করা, মানুষের অবস্থা সম্পর্কে খোজ-খবর নেয়া, মানুষকে ইসলামী শরীয়তের বিধান যেমন সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, রমযানের রোজা রাখা ও হজ করা ইত্যাদি বিধান পালনে বাধ্য করা, ওজন কম-বেশ করে কিনা তা তদারকি করা, বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং মানুষকে ধোঁকা দেয়া ও মানুষের সাথে মিথ্যা প্রতারণা করা হতে বিরত রাখা ইত্যাদি সবই ফরযে কেফায়াহ। যেমনটি আল্লাহর তা‘আলা বাণী-
 ( وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ ) إلخ
পূর্বোল্লেখিত আয়াতটি প্রমাণ করে। অর্থাৎ তোমাদের থেকে একটি জামাত এমন হওয়া চাই যাদের দ্বারা উল্লেখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে মূল লক্ষ্য হাসিল হয়। আর এ কথা সু-স্পষ্ট যে, কোনো বিষয়ে আদেশ দেয়া দ্বারা বিষয়টি হাসিল হতে প্রাসঙ্গিক যা কিছু প্রয়োজন তার প্রতিও আদেশ হয়ে যায়। ফলে বিষয়টির হাসিল যে সব কর্মের উপর মওকুফ থাকে তাও নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। (দেখুন: তাফসীর আস-সা‘দী পৃ: ১৪২।)
দুই- যারা বলে, কাফেররা মারা যাওয়ার পর সে আল্লাহর সামনে তোমার বিপক্ষে অভিযোগ করবে, কথাটি অনির্ভরযোগ্য; এর উপর কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। যে সব কাফেরদের দাওয়াত দেয়া হয়, তাদের কয়েক প্রকারে ভাগ করা যায়।
প্রথম প্রকার:  এক ধরনের কাফের আছে, যারা এমন কোনো দেশে বসবাস করে, তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ জানে না অথবা সহজে তার কাছে যাওয়া কোন মুসলিমের জন্য সম্ভব নয়। এ ধরনের কোন কাফের মারা গেলে তাদের কুফরের দায়-দায়িত্ব বা গুনাহ কোনো মুসলিমের উপর বর্তাবে না। কারণ, মুসলিমরা দুনিয়া জুড়েই বিদ্যমান। যেমন, যারা দাওয়াত দেয়, তাদের অনেকেই বলে, আজকে আফ্রিকার জঙ্গলে একজন মুর্তিপুজক মারা গেছে, তার দায়-দায়িত্ব মুসলিমদেরই নিতে হবে। এ ধরনের কথা বাতিল; ইসলামী শরিয়তের সাথে এ ধরনের কথার কোনো সম্পর্ক নাই। অন্যথায় রাসূল সা. ও তার সাহাবীরাও অপরাধী হওয়া সাব্যস্ত হয়। কারণ, রাসূল সা. এর নবুওয়তের যুগে অনেক মানুষ হিন্দুস্থান, চীন ও আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন আনাচে কানাচে মারা গেছেন, তারা কি কিয়ামতের দিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে?! আল্লাহ তা‘আলা কি তাদের এমন দায়িত্ব দিয়েছেন যা পালন করতে তারা অক্ষম। ফলে তাদের থেকে কোনো প্রকার ত্রুটি না পাওয়া সত্ত্বেও তাদের দোষী করবেন?! রাসূল সা. আল্লাহর দীন মানুষের নিকট পৌছিয়ে দেয়ার জন্য তার সাধ্য মত প্রাণ-পণ চেষ্টা চালিয়ে যান, তিনি বিভিন্ন দেশের রাজা বাদশা ও জনগণের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখে পাঠান এবং তিনি তার সাধ্য মত বিভিন্ন দায়ীদেরকে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। এখানে যদি মুসলিমদের কারো গুনাহ হয় তবে সে মুসলিম লোকটি গুনাহগার হবে, যে কোনো কাফের লোককে কাফের অবস্থায় দেখেও তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয় নি অথবা যে কাফেরটির অবস্থান সম্পর্কে জানত এবং তার কাছে যাওয়ার ক্ষমতাও তার ছিল, কিন্তু সে তাকে দাওয়াত দিতে যায় নি।
দ্বিতীয় প্রকার: কতক কাফের এমন আছে, যারা ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে শুনেছে এবং জেনেছে। তারা এ কথা জানে যে, মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্ব শেষ নবী এবং তার আনিত দ্বীনের উপর ঈমান আনা ও ইসলামে প্রবেশ করা ওয়াজিব। এতটুকু জানা ও শোনা ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং, এ ধরনের কাফেরদের সাথে যখন দেখা হবে, তখনই তাদের দাওয়াত ইসলামে প্রবেশ করার জন্য দাওয়াত দেয়া ও তাদের তাদের নিকট দ্বীন পৌঁছানো ওয়াজিব নয়। এ ধরনের কাফেরদের যদি দাওয়াত দেয়া না হয়, তাহলে তারা গুনাহগার হবে না। কারণ, তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছেছে এবং তাদরে উপর হুজ্জত তথা দলীল-প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ, রাসূল সা. কুরাইশদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন মজলিশ ও অনুষ্ঠানে ইসলামে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন। তারপর যখন তাদের সাথে দেখা হত, প্রতিবারই কোন কথা বলার পূর্বেই তাদের ইসলাম গ্রহণ করার দাওয়াত দিতেন না। সুহাইল ইবন ‘আমরের সাথে রাসূল সা. হুদাইবিয়ার সন্ধি লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু তখন তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। অনুরূপভাবে রাসূল সা. ইয়াহুদীদের সাথে বেচা-কেনা করেছেন, কিন্তু তখন তাদের ইসলামের দাওয়াত দেন নি।
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, যখন কোনো গ্রাম ও শহর হয় এবং সেখানে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায় যে কাফেদেরকে ইসলামে প্রবেশ করার দাওয়াত দেয় এবং তাদের দ্বীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দেয়। তাহলে তা যথেষ্ট হবে। আর বাকীদের জন্য দাওয়াত দেওয়া সুন্নত হিসেবে পরিগণিত হবে। কারণ, অপরের মাধ্যমে তাদের বিপক্ষে দলীল কায়েম হয়েছে এবং আল্লাহর নির্দেশ অপরের দ্বারা বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেখুন: শাইখ বিন বায রহ. এর ফতোয়া, [৩৩২/১]
সুতরাং যারা বলে, যদি কাফেরকে দাওয়াত দেয়া না হয়, তাহলে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে মুসলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে, তাদের কথা সঠিক নয়। কারণ, কিয়ামতের দিন কাফের বিবাদী হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই একজন মুসলিমের বিপক্ষে দায়িত্বে অবহেলা করার প্রমাণ দেখাতে হবে এবং আল্লাহর সামনে নিজেকে নির্দোষ ও অপারগ প্রমাণ করতে হবে। আর এটি কখনোই সত্য প্রমাণিত হবে না। কারণ, একজন কাফেরের ঈমান আনার জন্য রাসূল সা. সম্পর্কে জানা এবং তার কথা শোনাই যথেষ্ট। কারণ, রাসূল সা. এর বাণী ব্যাপক তাতে তিনি শুধু শ্রবণ করার উপর ঈমান আনাকে ওয়াজিব করে দেন। তিনি বলেন,
 ( وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّار ) رواه مسلم ( 153 ) من حديث أبي هريرة رضي الله عنه .
“যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ, ইয়াহূদী ও নাসারাদের মধ্যে যারাই আমার কথা শুনবে, তারপর আমি যা নিয়ে এসেছি তার উপর ঈমানা না এনে মারা যাবে সেই জাহান্নামের অধিবাসী হবে”। [মুসলিম: ১৫৩] আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত হাদীস।
সুতরাং যে সব কাফেরের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে তারপরও সে কুফরির উপর অটল থাকে তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে। নি:সন্দেহে বলা যায়, বর্তমান উন্মুক্ত বিশ্বে অধিকাংশ কাফের যারা মুসলিমদের সাথে বসবাস করে অথবা মুসলিমরা তাদের সাথে বসবাস করে, তাদের সবার নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গেছে। ফতোয়া সংক্রান্ত সৌদী স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন, “যে ব্যক্তি এমন দেশে বসবাস করে, যেখানে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া হয়, তারপরও সে ঈমান আনে না এবং সত্যের অনুসন্ধান করে না, সে ব্যক্তি তাদের মত হবে, যাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার পরও তারা ইসলাম কবুল করেনি এবং কুফরের উপর অবিচল থাকে। আবু হুরাইরা রা. এর হাদিসের ব্যাপকতা এর জ্বলন্ত প্রমাণ। দেখুন: ‘ফতোয়ায়ে লাজনায়ে দায়েমাহ’ [১৪৮/২] শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায, শাইখ আব্দুর রায্যাক আফীফী।
তবে কাফেরদেরকে ইসলাম বিষয়ে বুঝানো, তাদের সামনে ইসলামের পরিচয় তুলে ধরা, তাদের নিকট ইসলামকে ভালোভাবে পেশ করার চেষ্টা করা দ্বারা কাফেরদের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করা করা হয় এবং আল্লাহর নিকট তাদের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তৃতীয় প্রকার: ঐ সব কাফের যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি এবং কেউ তাকে ইসলামের দিকে ডাকেননি অথবা কোন মুসলিমের নিকট ইসলাম সম্পর্কে জানতে আসছে তখন তার উপর ওয়াজিব হল, সে তার সাধ্য অনুযায়ী তাকে ইসলামের দাওয়াত দেবে, আল্লাহর দ্বীন শেখাবে এবং ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান দেবে। যদি কোনো মুসলিম এ দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সে অবশ্যই বড় গুনাহগার হবে। আর ক্ষেত্রেও কাফেরের জন্য এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, সে আল্লাহর দরবারে ঐ মুসলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে। তবে সে আল্লাহর দরবারে ওজর পেশ করতে পারবে যে, তার নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি। তখন কিয়ামতের দিন তাকে পরীক্ষা নেয়া হবে।  আর যে ব্যক্তি জানতে পারে যে, লোকটির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি তার উপর ওয়াজিব হল, সে লোকটির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য যথা সম্ভব চেষ্টা করবে। যদি তার নিকট পৌছতে সক্ষম না হয়, তাহলে যে দা‘ঈর দ্বারা সম্ভব হয় তাকে তার নিকট পাঠাবে।
সময় ও যুগের পরিবর্তনের সাথে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতিও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কখনো টেলিফোন ও মোবাইলের দ্বারা দাওয়াত দেয়া যায় আবার কখনো চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দেয়া যায়। যেমন, রাসূল সা. তার যুগের বাদশাহদের চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দেন। আর যদি মুসলিমের ক্ষমতার মধ্যে না থাকে, তবে তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে না। এ কারণেই রাসূল সা. সারা দুনিয়ার সব জায়গায় দায়ী প্রেরণ করেননি এবং দুনিয়ার সব মানুষের নিকট তিনি চিঠি পৌছাননি। কারণ, সারা দুনিয়াতে দাওয়াত দেয়ার মত ক্ষমতাধর কোন ব্যক্তি তখন ছিল না এবং সবার নিকট চিঠি দেয়াও সম্ভব নয়।
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, এ সব ক্ষেত্রে দাওয়াত দেয়া কখনো ফরযে আইন হয়ে থাকে, যখন লোকটি এমন স্থানে হয়, যেখানে সে ছাড়া আর কেউ দাওয়াতি কাজের দায়িত্ব কেউ আদায় করতে পারবে না। যেমন, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার বিধান। কারণ, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা কখনো ফরযে আইন, আবার কখনো ফরযে কিফায়াহ হয়ে থাকে। যখন তুমি এমন স্থানে থাকবে, যেখানে তুমি ছাড়া এমন কোন ব্যক্তি নাই যে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দেবে, তখন তোমার উপরই ফরয হল, তুমি এ দায়িত্ব পালন করবে। আর যদি এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায় যে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে, তাহলে তা তোমার জন্য সুন্নতের পর্যায়ে থাকবে। তারপরও যদি তুমি তার কাছে দাওয়াত নিয়ে ছুটে যাও, তাহলে তা হবে ভালো কাজের আগ্রহী ও আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি প্রতিযোগী। দেখুন: শাইখ ইবন বায রহ. এর ফতোয়া, [৩৩১/১]
আল্লাহর অবশিষ্ট জমিন ও অন্যান্য মানব জাতিদের বিষয়ে শাইখ রহ. আরও বলেন, আলেমদের ও ক্ষমতাশীলদের যোগ্যতা ও ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের নিকট আল্লাহর দীন পৌঁছানো ওয়াজিব এবং ফরযে আইন। এ কথা দ্বারা একটি বিষয় স্পষ্ট হয়, আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার বিষয়টি ফরযে আইন বা ফরযে কেফায়াহ হওয়া একটি আপেক্ষিক বিষয়। সময় স্থান কাল ও পাত্র বিশেষ এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কখনো কখনো কোনো সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে দাওয়াত দেয়া ফরযে আইন হয়, আবার কখনো কখনো তাদের এলাকায় তাদের দাওয়াত দেয়ার মত কোনো লোক থাকে তখন দাওয়াত দেয়া সুন্নত হয়।
আর যারা ক্ষমতাশীল এবং যাদের ক্ষমতা ব্যাপক, তাদের দায়িত্ব বেশি। তাদের উপর ওয়াজিব হল, তারা দুনিয়ার আনাচে কানাচে তাদের সাধ্য অনুযায়ী দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেবে। দাওয়াত দেয়ার জন্য সব ধরনের উপকরণ অবলম্বন করবে এবং বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিকট তাদের ভাষায় ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেবে। যাতে প্রতিটি মানুষের নিকট তারা যে ভাষায় কথা বলে, সে ভাষায় দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে যায়। কারণ, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি-রেডিও, টেলিভিশন, পেপার পত্রিকা ইত্যাদির মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক সহজ। [দেখুন: ‘ফতোয়অ শাইখ ইবন বায’  ৩৩২/১।]
আর যে ব্যক্তি কোনো প্রচার মাধ্যম আবিষ্কার করতে সক্ষম অথবা কোনো ওয়েব সাইট খুলতে সক্ষম তাদের উপর ওয়াজিব হল, দুনিয়ার যে অংশে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে নি তাদের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য এ ধরনের প্রচার মাধ্যম বা ওয়েব সাইট খুলে তাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া । এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবহেলা, কার্পণ্য ও অলসতা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ক্ষমতাশীল ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের উপর অধিক ওয়াজিব।
সাউদী ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন, তবে যারা অমুসলিমদের দেশে বসবাস করে, যারা মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে কোন সংবাদ পায় নি এবং কুরআন হাদিস সম্পর্কে তারা কিছু জানে না, এ ধরনের মানুষ যদি দুনিয়াতে থাকে, তাদের বিধান- ফাতরাতের যুগের মানুষের বিধান। (ফাতরাত বলতে দুই নবীর সময়কালের মাঝখানের সময়টিকে বুঝানো হয়েছে, তাদের বিধান হলো, তাদেরকে হাশরের মাঠে পরীক্ষা করা হবে।) আলেমদের উপর ওয়াজিব হল, তাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত আকারে পৌঁছে দেয়া, যাতে তাদের বিপক্ষে দলীল কায়েম করা যায় এবং আল্লাহর দরবারে দায় মুক্ত হতে পারে। অন্যথায় কিয়ামতের দিন তাদের সাথে ঐ ধরণের ব্যবহার করা হবে যেমন ব্যবহার করা হয়ে থাকে যারা মুকাল্লাফ নয় তাদের সাথে। যেমন, পাগল, ছোট বাচ্চা ইত্যাদির সাথে যে আচরণ করা হয়, তাদের সাথেও তাই করা হবে। দেখুন: “ফতোয়া আল-লাজনাতিদ-দায়েমাহ” [১৫০/২]
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায, শেখ আব্দুর রাযযাক আফীফী. দেখুন প্রশ্নোত্তর- ( 131777 ) এবং  ( 26721 ) এবং ( 84308 )
আল্লাহই ভালো জানেন।